অনলাইন ডেস্কঃ ইতেকাফ হলো মুসলিমদের একটি ধর্মীয় চর্চা, যেখানে একজন মুসলমান তার নিজস্ব ইচ্ছানুযায়ী এক বা একাধিক দিন নিকটবর্তী মসজিদে দিনানিপাত করেন। প্রিয়নবী হয়রত মুহম্মদ (স.) রমজান মাসের শেষ দশদিন মসজিদে অবস্থান করে ইতেকাফ পালন করতেন তাই এ মাসে এ ইবাদত পালনের গুরুত্ব অপরিসীম।
রমজানে ইতেকাফের উদ্দেশ্য হচ্ছে লাইলাতুল কদর প্রাপ্তি। এর মাধ্যমে মহান আল্লাহর একান্ত সান্নিধ্য লাভের প্রত্যাশা করেন ইতেকাফ পালন কারীরা।
রাসূল (স.) ইতেকাফে বসে গভীর ইবাদত-বন্দেগিতে ব্যস্ত থাকতেন। ইতেকাফ শুধু নবিজীর সুন্নাতই নয় বরং কোরআনুল কারিমেও ইতেকাফের বিধান ঘোষণা করা হয়েছে। আবার ইতেকাফের অনেক উপকারিতাও আছে।
রমজান মাসের সুন্নত ইতেকাফ ছাড়া আরও দু’ধরনের ইতেকাফ রয়েছে বলে মত প্রকাশ করেছেন ইসলাম ধর্ম বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, ওয়াজিব ও নফল ইতেকাফ পালনের প্রচলন রয়েছে। সুন্নত ইতেকাফ পালন করা হয় রমজানের শেষ দশ দিন। আর কেউ যদি প্রত্যাশা পূরণের মানত করে মহান আল্লাহর কাছে ইতিকাফের অঙ্গীকার করেন তখন সে ইতিকাফ ওয়াজিব রূপে গণ্য হয়। আর নফল ইতিকাফ যে কোনো সময় পালন করা যায়।
কেমন ছিলো প্রিয়নবী হযরত মুহম্মদ (স.) এর ইতেকাফ
২০ রমজান ইফতারের আগে থেকে শুরু করে ঈদের চাঁদ না দেখা পর্যন্ত মসজিদে অবস্থান গ্রহণ করে ইতেকাফ পালন করতেন রাসূল (স.)।হাদিসে এসেছে-‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানের শেষ দশদিন ইতেকাফ করতেন।’ (বুখারি, মুসলিম)। প্রিয় নবী কোনো রমজান মাসে ইতেকাফ বাদ দেননি। কথিত রয়েছে, কোনো এক রমজান মাসে তিনি ইতেকাফ করতে পারেননি। এজন্য তিনি পরবর্তী বছর ২০ দিন ইতেকাফ করে তা পূরণ করেছেন।
ইতেকাফ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ ও রাসূল (স.) নির্দেশ
মহান আল্লাহর কাছে ইতেকাফের মর্যাদা ও উপকারিতা অনেক বেশি। ইবাদত-বন্দেগির জন্য স্রষ্টার দেওয়া বিধানও বটে। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে হজরত ইবরাহিম ও ইসমাঈল আলাইহিস সালামকে ইতেকাফের বিধান সম্পর্কে সূরা বাকারায় সুস্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন এভাবে-‘আর স্মরণ করো, যখন আমি কাবাকে মানুষের জন্য মিলনকেন্দ্র ও নিরাপদ স্থান বানালাম এবং (আদেশ দিলাম যে,) তোমরা মাকামে ইব্রাহিমকে নামাজের স্থানরূপে গ্রহণ করো। আর আমি ইবরাহিম ও ইসমাইলকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম যে, ‘তোমরা আমার ঘরকে তাওয়াফকারী, ইতেকাফকারী ও রুকুকারী-সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র করো (আয়াত ১২৫)।’
আরও পড়ুন ফিতরা দিচ্ছেন তো? না দিলে কী হয় জানেন?
রাসূল (স.) নির্দেশ দিয়েছেন ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এক দিন ইতেকাফ করবে আল্লাহ তার এবং জাহান্নামের মাঝে তিন খন্দক দূরত্ব সৃষ্টি করে দেবেন। অর্থাৎ আসমান ও জমিনের মাঝে যত দূরত্ব আছে তার চেয়েও বেশি দূরত্ব সৃষ্টি করে দেবেন (বায়হাকি)।’
নারীরা কী ইতোকাফ করতে পারবেন?
ইতেকাফ শুধু পুরুষের জন্য নয়। নারীদের জন্যও ইতিকাফের বিধান রয়েছে। উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত ‘নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যু পর্যন্ত রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফ করেছেন। তার মৃত্যুর পর তার স্ত্রীগণ ইতিকাফ করেছেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২০৩৬; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১১৭২)
আমাদের দেশে নারীরা খুব কমই ইতেকাফ করেন। এর অন্যতম কারণ হলো তাদের জন্য ইতেকাফের উপযুক্ত স্থানের অভাব। তবে নারীরা চাইলে ঘরে বসেও ইতেকাফ পালন করতে পারেন।
নারীদের ইতেকাফের বিধান: রমজানের শেষ দশকের ইতেকাফ পুরুষের জন্য সুন্নতে মুয়াক্কাদা আলাল কিফায়া। অর্থাৎ মহল্লার মসজিদে পুরুষদের মধ্যে একজনও যদি ইতিকাফ করে তাহলে পুরো মহল্লাবাসী দায়মুক্ত হয়ে যাবে। আর নারীদের জন্য ইতিকাফ করা মুস্তাহাব।
নারীদের ইতিকাফের স্থান: যেসব স্থানে মসজিদে মহিলারা পর্দার অন্তরালে সালাহ্ আদায় করতে পারেন সেখানে ইতেকাফ পালন করা যায়, তবে সেটি সম্ভব না হলে নিজের ঘরে একটি স্থান নির্দিষ্ট করে সেখানেও ইতেকাফ পালন করেতে পারেন। সেক্ষেত্রে কিছু নিয়ম পালন করা জরুরি, সেগুলো হলো-
ইতিকাফের স্থানে পর্দা: নারীরা তাদের ইতেকাফের স্থান পর্দা দিয়ে ঢেকে নিবেন। যেন ঘরে কোনো পুরুষ লোক আসলে তাদের স্থান পরিবর্তন করতে না হয়।
স্বামীর অনুমতি গ্রহণ: বিবাহিত নারী ইতেকাফ করতে চাইলে স্বামীর অনুমতি নিতে হবে। স্বামীর অনুমতি ছাড়া ইতেকাফ করা অনুচিত। আর স্বামীদের উচিত, যুক্তিসঙ্গত ও গ্রহণযোগ্য কারণ ছাড়া স্ত্রীদের ইতিকাফে বাধা না দেওয়া। তাদের ইতেকাফের সুযোগ করে দেওয়া। এতে উভয়ই সওয়াব পাবেন। (রদ্দুল মুহতার ২/৪৪১; ফাতাওয়া আলমগীরী ১/২১১)
স্বামী ও সন্তানের দেখাশোনার প্রয়োজন হলে: যে নারীর স্বামী বৃদ্ধ বা অসুস্থ কিংবা তার ছোটছোট ছেলে-মেয়ে রয়েছে এবং তাদের সেবা-শুশ্রূষা করার কেউ নেই, সে মহিলার জন্য ইতিকাফ করার চেয়ে তাদের সেবাযত্ন করা উত্তম।
তথ্যসূত্র; সংগৃহীত
Leave a Reply